Remove the background

Remove the background
Remove the background from your image for free with adobe express

Saturday, July 31, 2021

হাতুরে ডাক্তারের কাছে ড্রেসিং নয়

হাতুরে ডাক্তারের কাছে ড্রেসিং নয়


মেডিকেল সায়েন্সের সার্জারী চিকিৎসায় ড্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চ্যাপ্টার। বিভিন্ন কাটা ছেড়া, পোড়া, ঘা, ক্ষত বা আলসারে ড্রেসিং করা হয়। ড্রেসিং করা জিনিস পত্রগুলো হতে হয় স্টেরাইল বা জীবানু মুক্ত এবং জিনিস পত্র গুলো নিয়মিত বিশেষ উপায়ে পরিস্কার (স্টেরিলাইজেশন) ও সংরক্ষন (Preserve) করা হয়। এই পরিস্কার কিন্তু যেন তেন উপায়ে নয়, বরং বিশেষ ভাবে করা হয়। যেমন: অটোক্লেভিং, লাইজল (over night), ফরমাল্ডিহাইড, গ্লুটারাল্ডিহাইড ইত্যাদি দিয়ে। যা বাইরে কোনো দোকানে বা মানহীন ক্লিনিকে কখনই সম্ভব নয়।

ড্রেসিং করার যে সকল জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় তা নিম্ন রুপ:

গজ, ব্যান্ডেজ, রিবোন গজ, আরটারি ফরসেপ্স, টুথ ফরসেপ্স, সিজোর, পোভিসেপ, হেক্সিসল, স্পিরিট, ইউজল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, নরমাল স্যালাইন (০.৯%), গ্লভস, মাইক্রোপোর ইত্যাদি।

এই সবই সংরক্ষন খুবই গুরুত্ব পুর্ণ। অনেকে মনে করেন, পরিস্কার তুলা বা কাপড় দিয়েও তো পরিস্কার (ড্রেসিং) করা যায়। এটা মোটেও ঠিক নয়। হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় খুব কেয়ারফুলি এবং স্টেরিলাইজিং মেথডে অর্থাৎ ডাক্তারের হাত হয় স্পিরিট বা হেক্সিসল দিয়ে স্টেরিলাইজড বা স্টেরাইল গ্লভস পড়া, যন্ত্রপাতি ও জিনিস গুলোও স্টেরিলাইজড। এভাবে গুরুত্বের সাথে করা হয় ড্রেসিং।

কোনো কোনো অপারেশনের পর কাটা জায়গাটায় ইনফেকশন হয়ে যায় (যেমন: পুজ জমে, ফুলে যায়, জায়গাটার তাপমাত্রা বেড়ে যায়, জ্বর আসে), তখন সুতা কেটে কাটা জায়গা খুলে দেওয়া হয় এবং নিয়মিত ড্রেসিং করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে গর্ত বেশি হলে ইউজল বা পোভিসেপে চুবানো রিবন গজ গর্তের ভেতরে প্যাক দেওয়া হয়। ঐ গজই ভেতরের পুজ শুষে নেয় এবং মৃত কোষগুলো দুর করে।

কিছু ক্ষতে দিনে একবার, কিছু ক্ষতে দিনে দুইবার, কিছু তে একদিন পরপর বা দুইদিন পরপর বা কিছু জায়গায় ৩ দিন পর ড্রেসিং করা হয়। কয়দিন পরপর করতে হবে তা নির্ভর করে ক্ষত বা উন্ডের প্রকৃতির উপর। ক্লিন কাট হলে দুইদিন পর করলেই হয়। ডার্টি বা ক্রাস ইঞ্জুরি হলে প্রতিদিন করা হয়। এক্সিডেন্টে খুব খারাপ ভাবে ক্ষত তৈরী হয়। সেসব ক্ষেত্রে রোজ ড্রেসিং লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ মেশানো গজ (মেডিকেটেড গজ) ব্যবহার হয়। যেমন: সুপ্রা টুলি, সিলিকন জেল শিট, ভ্যাসলিন গজ ইত্যাদি। অর্থোপেডিকের ক্রাশ ইঞ্জুরি গুলোতে আবার ককটেল ড্রেসিং করা হয়। মজার নামের এই ড্রেসিং এ ব্যবহার হয়- হেক্সিসল, পোভিসেপ ও ইউজল এক সাথে মেশানো। তাই ককটেল।

ড্রেসিং করার সময় অনেক রোগী বিশেষ করে যাদের ক্ষত অনেক বড়, তার খুব কষ্ট পান। চিৎকার করেন। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের মন হতে হয় পাথরের মত কঠিন। হালকা করে ড্রেসিং করলে উপকার কম হয়। কারন তাতে জীবানু, সাদা সাদা মৃত টিস্যু বা ফাইব্রাস টিস্যু থেকে যেতে পারে। সেগুলো তুলে না দিলে, সেখানে ব্লিডিং পয়েন্ট বা রক্তের প্রবাহ আসে না। তা না আসলে সেই ক্ষতটা হিল বা সুস্থ হয় না বা অনেক সময় লাগে হিল হতে। তাই কষ্ট হলেও ভালভাবে পরিস্কার করা উচিৎ। এসব ক্ষেত্রে ড্রেসিং এর ৩০ মিনিট পূর্বে ভল্টালিন সাপোজিটরি দিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যদিও এই সাপোটিরির ব্যবহার বইপত্রে রেফারেন্স নাই, তবুও রোগীর কষ্ট কিছুটা লাঘব করার জন্য এটা অনেকে ব্যবহার করেন।

তবে লোকাল এনেস্থেশিয়া দিয়ে ড্রেসিং করা উচিৎ নয়। যদিও ব্যবহার করলে বেশিরভাগ রোগীর কোনো জটিলতা হয় না, তবুও সামান্য কিছু রিস্ক থেকে যায় । তাই না করাই ভাল।

শরীরের বহির্ভাগের ঘা বা ক্ষতের চিকিৎসার প্রধান অংশ হল সঠিক ড্রেসিং। ড্রেসিং না করে, পুজ বের না করে যতই এন্টিবায়োটিক দেওয়া হোক, লাভ হবে না। কারন পুজকে বলা হয় ফারমাকোলজিক্যাল ব্যারিয়ার (ওষুধের বাধা)। ওষুধ পুজের মধ্যে গিয়ে কাজ করতে পারে না। তাই ড্রেসিং ই একমাত্র সমাধান। এসব ক্ষেত্রে ড্রেসিং কে প্রধান চিকিৎসা বললেও খুব ভুল হবে না। তবে সাথে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক ও দিতে হয়। তাই সঠিক ড্রেসিং এবং উপযুক্ত এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে এসব ক্ষতের চিকিৎসা সম্ভব।

আমাদের দেশের অনেক জায়গায় দেখা যায়, ওষুধের দোকানে বা হাতুরে ডাক্তারের বাড়িতে এরকম ড্রেসিং করা হয়। যেখানে জীবানু মুক্ত পরিবেশ আছে কি না, তাতেই সন্দেহ থেকে যায়। অনেকে শুধু গরম পানিতে ড্রেসিং এর যন্ত্রপাতি বা ব্লেড চুবিয়েই ভাবছেন জীবানু মুক্ত হয়ে গেছে, এখন ইচ্ছামত ড্রেসিং করা যাবে- এ ভাবনা মোটেও ঠিক নয়। ড্রেসিং হতে হবে হাসপাতালে, কারন সেখানে জীবানু মুক্ত পরিবেশে, স্টেরাইলাইজড উপায়ে ড্রেসিং করা হয়। আর কবিরাজ, ওষুধের দোকানদার বা হাতুরে ডাক্তারের এক হাত ভালভাবে ওয়াশ না করেই সবাইকে হয়ত ড্রেসিং করছেন, এটাও খেয়াল করা উচিৎ।

মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা দান দেখে মনে হতে পারে, খুব সহজ একটি কাজ, এটি যে কেউই করতে পারে, তবে এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। প্রকৃত ডাক্তার একজন রোগীর দায়িত্ব নেন, কিন্তু হাতুরে ডাক্তার কখনই একটা রোগীর দায়িত্ব নেন না। ডাক্তার একটা রোগীর শেষ পর্যন্ত দেখেন যে, রোগটা কোনদিকে যাচ্ছে, ভাল হলেও তিনি শেখেন, খারাপ হলেও তিনি শেখেন। কিন্তু হাতুরেরা ভাল করেই জানে যে, ভাল না হলে ডাক্তার তো আছে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment and give me Suggest any time any way in my comment box or email address.