ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকার সময়টাতে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে আড্ডা আর মিষ্টি খাওয়ার স্মৃতিটা বোধ করি কখনোই ভোলেননি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তাই তো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার পর নিজ জেলা পাবনায় প্রথম সফরে তিনি সশরীরে হাজির হলেন সেখানে।
পাবনা সফরের প্রথম দিন সোমবার রাতে হঠাৎ করেই রাষ্ট্রপতি গিয়ে হাজির হন স্মৃতিঘেরা ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষটিকে পুরনো দিনগুলোর মতো একইসঙ্গে অবাক ও খুশি হয়ে ওঠেন দোকানের মালিক, রাষ্ট্রপতির বন্ধু, স্বজন ও অনুসারীরা।
১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ব্যবসা চলছে তিন পুরুষ ধরে। মধ্য শহরের রায়ের বাজারে এই দোকানের রসগোল্লা, প্যারা মিষ্টি পাবনার গণ্ডি ছাড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছে সারা দেশে।
পাবনার মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলা চলে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারকে। স্বাধীনতার আগে থেকেই পাবনার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতাদের আড্ডা বসত দোকানটিতে।
রাজনৈতিক সফরে পাবনায় এসে এই দোকানে বসে মিষ্টি খেয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও।
সোমবার রাত ৮টা। হঠাৎ করেই শহরের ব্যস্ততম আব্দুল হামিদ সড়কে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দৌড়াদৌড়ি। একপর্যায়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরাও থমকে দাঁড়িয়ে যান। সড়কের দু’পাশে উৎসুক জনতার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় একটি মিষ্টির দোকানের দিকে।
রাজনীতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আড্ডা ও পদচারণার কারণে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নামও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কমরেড প্রসাদ রায়, কমরেড মনি সিংহসহ অনেকে এখানে আসতেন। সতীর্থদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনও।
কর্মজীবনেও তিনি যখনই পাবনায় এসেছেন একবার হলেও ঘুরে যেতেন প্রিয় দোকানটিতে। তাই কঠোর নিরাপত্তাবলয় উপেক্ষা করে সরকারি সফরের প্রথম দিনে হঠাৎ করেই রাষ্ট্রপতি ফিরে যান স্মৃতিময় আড্ডার জায়গাটিতে।
স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিতে খবর আদান-প্রদানের পাশাপাশি গোপনে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ ঘোষ এবং তার ছেলে নিমাই চন্দ্র ঘোষ। এ করণে অনেকবার হামলাও হয়েছে দোকানটিতে, দেয়া হয়েছে আগুন।
লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান স্বত্বাধিকারী ভোলানাথ ঘোষ বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে রাষ্ট্রপতি হঠাৎ করে দোকানে আসেন। এ সময় তাকে দেখে আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ি। সফরের প্রথম দিন যে তিনি আমাদের দোকানে আসবেন তা ভাবতেই পারিনি। এতা খুশি হয়েছি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ১০ মিনিট দোকানে অবস্থান করেন। তিনি পুরনো দিনের অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন। আগে রাষ্ট্রপতি শহরের রূপকথা সড়কের জলযোগ থেকে সিঙ্গাড়া ও আলুর চপ খেতেন। আজও তিনি জলযোগের সিঙ্গাড়া খেয়েছেন।’
জলযোগের ম্যানেজার ফজলে রাব্বি জানান, বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতির জন্য ৬০টি শিঙাড়া নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘এই আনন্দ ও খুশি শুধু আমাদের নয়, সব পাবনাবাসীকেই ছুঁয়ে গেছে। কারণ পাবনার কৃতী এই সন্তান তার শেকড় ভোলেননি।’
পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ‘এমন ঘটনা সত্যিই আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তিনি যে আমাদের মানুষ, পাবনার ছাওয়াল, এটা কিন্তু আবারও প্রমাণ হলো।’
রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু অধ্যাপক শিবজিত নাগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবি ইসলাম বলেন, ‘মো. সাহাবুদ্দিন পাবনায় প্রেস ক্লাব, লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মিডিয়া সেন্টার ও ডায়াবেটিক সমিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আর হয়তো এভাবে আসতে পারবেন না। আমরা তাকে সব সময় মিস করব।’